সোনার তরী
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা।
কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা।
রাশি রাশি ভাড়া ভাড়া ধান-কাটা হল সারা,
ভরা নদী ক্ষুরোধারা খরপরশা-
কাটিতে কাটিতে ধান এলো বরষা ॥
একখানি ছোট খেত, আমি একেলা-
চারি দিকে বাঁকা জল করিছে খেলা।
পরপারে দেখি আঁকা তরুছায়ামসী-মাখা
গ্রামখানি মেঘে ঢাকা প্রভাতবেলা।
এ পারেতে ছোটো খেত, আমি একেলা ॥
গান গেয়ে তরী বেয়ে কে আসে পারে।
দেখে যেন মনে হয়, চিনি উহারে।
ভরা পালে চলে যায়, কোনো দিকে নাহি চায়,
ঢেউগুলি নিরুপায় ভাঙ্গে দু ধারে-
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে ॥
ওগো, তুমি কোথা যাও কোন্ বিদেশে ?
বারেক ভিড়াও তরী কূলেতে এসে।
যেয়ো যেথা যেতে চাও, যারে খুশি তারে দাও-
শুধু তুমি নিয়ে যাও ক্ষণিক হেসে
আমার সোনার ধান কূলোতে এসে॥
যত চাও তত লও তরণী- 'পরে।
আর আছে? -আর নাই, দিয়েছি ভরে।
এতকাল নদীকূলে যাহা লয়ে ছিনু ভুলে
সকলই দিলাম তুলে থরে বিথরে-
এখন আমারে লহো করুণা ক'রে ॥
ঠাই নাই, ঠাঁই নাই, ছোট সে তরী
আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি।
শ্রাবণগগন ঘিরে ঘন মেঘ ঘুরে ফিরে,
শূন্য নদীর তীরে রহিনু পড়ি-
যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী॥
কবিতা - সোনার তরী
কবি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রচনাকাল - ফাল্গুন, ১২৯৮
Bengali poem
Thank you for watching. Please share and flow to https://poemsongandeducation.blogspot.com/ Website. 🙏
إرسال تعليق
Don't Share any links