বিশ্বভারতী



মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর আধ্যাত্ম জীবনে উন্নীত হওয়ার কল্পে এবং শান্তির প্রত্যাশায় ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে ১ মার্চ রায়পুরের জমিদার প্রতাপ নারায়ণ সিংহের কাছ থেকে বোলপুর মৌজার ভুবনডাঙ্গা নামক গ্রামে কুড়ি বিঘা জমি বন্দোবস্ত নেন। ১৯০৫ সালে ১৯ জানুয়ারি মহর্ষির পরলোক গমনের পর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ মহর্ষির প্রতিষ্ঠিত ব্রহ্মচর্য্য আশ্রমকে সার্ব্বিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করবার প্রয়াস পান। সেই প্রসঙ্গে তিনি প্রখ্যাত বৈজ্ঞানিক আচার্য্য জগদীশ চন্দ্র বসুকে লেখেন- "শান্তিনিকেতনে আমি একটি বিদ্যালয় খুলবার জন্য বিশেষ চেষ্টা করিতেছি। যেখানে ঠিক প্রাচীনকালের গুরু গৃহবাসের মত সমস্ত নিয়ম, বিলাসিতার নাম গন্ধ থাকিবে না। ধনী-দরিদ্র সকলকেই কঠিন ব্রহ্মচর্য্যে দীক্ষিত হতে হইবে।" পরবর্তীকালে কবিগুরু উক্ত প্রতিষ্ঠানকে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপ দেন এবং ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে ডিসেম্বর মাসে বিশ্বভারতীর মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান করা হয়। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে জুলাই মাস হতে কাঙ্খিত প্রাচ্যের মতাদর্শে শিক্ষা শুরু করা হয়। প্রাচীন উপনিষদিক চিন্তা, বৌদ্ধ ধর্ম এবং সাহিত্য, পালি, তথা সময়ান্তের চীনা, তিব্বতি ও ইসলামিক সংস্কৃতি ও সাহিত্যের সাথে পরিচিত হওয়ার হেতু এবং মূল্যায়নে পঠন-পাঠনের ব্যবস্থা করা হয়।


 ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে শেষের দিকে চিত্রকলা এবং সংগীত শিক্ষার জন্য "কলাভবন" -এর জন্ম হয়।  যদিও পরবর্তীকালে উক্ত দুইটি বিভাগকে "কলা ভবন" ও "সংগীত ভবন" নামে পৃথক করে দেওয়া হয় এবং প্রাচ্য বিদ্যানুশীলনের কেন্দ্রটিকে "উত্তর বিভাগ" নামে প্রথমে উল্লেখ করা হলেও ইহা বর্তমানে "বিদ্যাভবন" নামে পরিচিত। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে ডিসেম্বর মাসে (৮ই পৌষ)  কবিগুরু বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠানকে সর্ব্বসাধারণের হিতার্থে উৎসর্গ করেন এবং ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে ১৬ই মে (১৩২৯ সালে ২রা জ্যৈষ্ঠ)  বিশ্বভারতী নব সংবিধান রেজিস্ট্রি করা হয়। অধিষ্ঠিত ছিলেন। তাঁর মহাপ্রয়াণের পর অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং তার পরে সরোজিনী নাইডু এই পদ অলঙ্কৃত করেন। 


১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে সংসদে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে বিশ্বভারতীকে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা হয় এবং সেই সুবাদে পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু আচার্য পদে অধিষ্ঠিত হন।  বর্তমানে বিশ্বভারতীর পরিচালনার ভার সর্বোচ্চ নিয়ামক সমিতি সংসদ দ্বারা পরিচালিত এবং "কর্ম সমিতি" -র অধীনে দৈনন্দিন আয়-ব্যয়ের হিসেব, কর্ম্মীগোষ্ঠীর নিয়োগ ইত্যাদি হয়ে থাকে।  তাছাড়া শিক্ষারসংক্রান্ত যাবতীয় দায়িত্ব "শিক্ষা সমিতি" বহন করে থাকে। ফলে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা, নিয়মানুবর্তিতা এবং ধারাবাহিক ঐতিহ্য বাংলা তথা ভারতের সর্বশেষ গর্বের বস্তু

Post a Comment

Don't Share any links

Previous Post Next Post